লেখকঃ শেখ আবুল আলা মাসুম
শিক্ষক, ফকিরহাট কারামতিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সম্মানিত করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, দিয়েছেন জ্ঞান-বুদ্ধি ও চিন্তা করার ক্ষমতা। তাঁর অসীম দয়ায় আমরা এই দুনিয়ার জীবন লাভ করেছি। কিন্তু এ জীবন চিরস্থায়ী নয়। একদিন আমাদের সবাইকে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হবে। মৃত্যুর পর আমাদের আবার উঠিয়ে দাঁড় করানো হবে হাশরের ময়দানে, যেখানে প্রতিটি কাজের হিসাব দিতে হবে।
এই কঠিন দিনটির কথা মনে রেখে এখন থেকেই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করে তোলা আমাদের জন্য একান্ত জরুরি। কীভাবে এই সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়? কুরআন ও হাদিসের আলোকে চারটি মৌলিক উপায়ের কথা এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
১. ফরজ ও মৌলিক ইবাদতে দৃঢ়তা-
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রথম ধাপ হলো ফরজ ও ওয়াজিব ইবাদতসমূহ যথাযথভাবে পালন করা। এর মধ্যে রয়েছে—কালিমায়ে তাইয়্যেবা’র প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন, জামাতে সালাত আদায়, যাকাত প্রদান, রমজানে রোজা রাখা, সামর্থ্য থাকলে হজ আদায় করা এবং আল্লাহর জমিনে তাঁর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করা।
এ ছাড়া আল্লাহ যেসব কাজ থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা এবং যেসব নির্দেশ দিয়েছেন তা পালন করাও এই অংশে অন্তর্ভুক্ত। বান্দার হক ও আল্লাহর হক—উভয়ই আদায় করতে হবে।
২. কুরআন-হাদিস ও ইসলামি সাহিত্য অধ্যয়ন-
আল্লাহর সাথে সম্পর্ক গড়তে হলে আগে তাঁকে জানতে হবে। তাঁকে জানার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো কুরআন ও রাসুল (সা.)-এর হাদিস। এজন্য প্রয়োজন নিয়মিত কুরআনের তাফসির পড়া, ছিয়া সিত্তা (হাদিসের ছয়টি মূল গ্রন্থ) অধ্যয়ন করা এবং নির্ভরযোগ্য ইসলামি সাহিত্য পাঠের মাধ্যমে নিজের চিন্তা ও জীবনধারাকে কুরআনের আলোয় আলোকিত করা।
৩. নফল ইবাদতের চর্চা-
ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল ইবাদতও একজন মুসলমানের আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করে। রাতের নিঃশব্দে তাহাজ্জুদে দাঁড়ানো, কুরআন তেলাওয়াত করা, ইস্তেগফার করা, নিজের গোনাহ নিয়ে চিন্তা করা ও তওবা করা—এসবই আত্মশুদ্ধির পথে সহায়ক। প্রতি সপ্তাহে নফল রোজা রাখা, গোপনে দান-সদকা করা, মানুষের উপকারে এগিয়ে আসাও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কার্যকর মাধ্যম।
৪. দোয়া ও জিকিরে হৃদয় সজীব রাখা-
আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার এক অনন্য উপায় হলো তাঁকে সর্বক্ষণ স্মরণ করা। প্রতিটি কাজ শুরু করার আগে বিসমিল্লাহ বলা, প্রতিটি কাজে নির্ধারিত দোয়া পড়া, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ—এসব যিকির নিয়মিত করা উচিত।
পাশাপাশি, সুরা ফাতিহা, সুরা ইখলাস, সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত, আয়াতুল কুরসি, সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার, কুনুতে নাজেলা, দুরুদে ইব্রাহিম ইত্যাদি পাঠ করাও নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করা দরকার।
আসুন, আমরা এই চারটি সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ আমল নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করি। মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সে তাওফিক দান করুন।আমিন।