মোঃ আজগার আলী, জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরায় এক ওয়ার্ড যুবলীগনেতার অবৈধ ড্যাম্পারে সিমেন্ট কংক্রীটের তৈরী গ্রামীন সড়ক নষ্ট করার অপরাধে তার শাস্তি দাবী করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। ওই যুবলীগ নেতার নাম বাবলু রহমান। সে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের বলাডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মৃত. আবুজাফর ঘোষের ছেলে এবং ৭ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
বাবলু আওয়ামী লীগ সরকারের আমল থেকে মাটি ব্যবসার সাথে জড়িত ও রয়েছে বেশ কয়েকটি ড্যাম্পার গাড়ি। তার ড্যাম্পার গাড়ীতে স্থানীয় সড়কগুলো নষ্ট হলেও দলীয় প্রভাব থাকায় তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস হয়নি। তাছাড়া, মাটি ব্যবসা করে কামিয়েছে কোটি কোটি টাকা। কোন কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে গেলেই টাকা দিয়ে কিনে ফেলেন বাবলু। মূলত: ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানের সাথে দহরম মহরম সম্পর্ক থাকায় সে মাটি ব্যবসা ও ড্যাম্পার ব্যবসার সাথে জড়িত হয়।
তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। স্থানীয় এলাকাবাসীর তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এই যুবলীগ নেতা বাবলুর মাটি ব্যবসায়ের আরেক পার্টনার শফিকুজ্জামান (ময়না মেম্বার) ইউনিয়নের বলাডাঙ্গা গ্রামের বটতলা মোড় সংলগ্ন রেজা হাজীর জমি থেকে মাটি কিনে সেই মাটি পাশের এসবি নামক ইটভাটায় বিক্রি করেছেন। তবে সবকিছু দেখভাল করছেন এই বাবলু। এতে করে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ছয়ঘরিয়া টু আখড়াখোলা সড়ক দিয়ে ১০ থেকে ১২টি ড্যাম্পার গাড়ীতে করে টানা হচ্ছে।
ফলে এই সড়কটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সড়কের প্রত্যেক পরতে পরতে দেখা দিয়েছে ফাঁটল। কোন কোন স্থানে ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। কিন্ত বিষয়টি প্রশাসনের নজরে দিলেও কোন প্রতিকার মিলেনি বলে জানান একাধিক ব্যক্তি।
মঙ্গল ও বুধবার (৮ ও ৯ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, গ্রামের ভেতর দিয়ে সিমেন্ট কংক্রিটে বানানো ছয়ঘরিয়া টু আখড়াখোলাগামী সড়কে প্রতি ৫/৭ মিনিট পর পর ১০ থেকে ১২টি ড্যাম্পার গাড়ী যাতায়াত করছে। ভেঙে যাওয়া কংক্রিট ও গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়া মাটি শুকিয়ে উড়ছে ধুলো। অপর দিক থেকে কোন যানবাহন বা একটি মোটর সাইকেলও চলাচলের জায়গা নেই। গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এলোমেলোভাবে ছুটোছুটি করছে। এতে যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা।
সিমেন্ট কংক্রীটের তৈরী সড়কের অধিকাংশ স্থান ভেঙে চৌচির হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তাটি চলাচলের অনুপযোগী হবে বা একেবারে নষ্ট হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। অবিলম্বে এই ড্যাম্পার গাড়ি চলাচল বন্ধ ও রাস্তাটি রক্ষা করার দাবী জানান তারা। একই সাথে রাস্তা নষ্টের অপরাধে ওই মাটি ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা বাবলু ও ময়না মেম্বারের শাস্তির দাবী জানান। মাটি কাটা শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই মাটির বিষয়ে আগেও অনেক সাংবাদিক এসেছিল। কিন্তু তারা কেউ ছবি তুলেনি বা ভিডিও করিনি।
সবাই বাবলু রহমানের সাথে দেখা করে চলে গেছে। তবে এর কিছুক্ষণ পরেই যুবলীগ নেতা বাবলু রহমান ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি নিজেকে মাটি ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে দাম্ভিকতার সাথে বলেন, হাজী সাহেবের জমি কিন্তু মাটি ক্রয়-বিক্রয়ের সকল বিষয় আমি দেখাশোনা করি। আপনারা এসেছেন কি করতে হবে তাই বলেন। সাতক্ষীরার সব সাংবাদিক আমাকে চেনে। আমি ১৪ বছর যাবৎ মাটির ব্যবসা করি। কেউ আমার দিকে ক্যামেরা ধরতে সাহস পায়নি। আপনারা আমার মোবাইল নাম্বার নিয়ে যান। পরে আমার সাথে যোগাযোগ কইরেন।
এদিকে ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাতক্ষীরা সদর ইউএনও মুহাম্মদ শোয়াইব আহমাদের সাথে কথা হলে তিনি কিছু ভিডিও এবং ছবি তাঁর ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানোর কথা বলেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন।
অভিযোগ আছে-প্রশিক্ষিত চালকের পরিবর্তে উঠতি বয়সী তরুণ আবার অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের দিয়ে চালানো হচ্ছে এসব ড্যাম্পার ট্রাক। মূলত ইট ভাটার মাটি টানার কাজে ব্যবহার হচ্ছে গ্রামীণ সড়কে চলাচল নিষিদ্ধ এ যান। তাতে সড়কে চলাচলকারী সাধারণ পথচারীদের জন্য যেমন ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি অবৈধ এসব গাড়ী চলাচলে এলাকার অধিকাংশ সড়ক মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে। আইনের তোয়াক্কা না করেই গ্রামীণ সড়কে এ ড্যাম্পার ট্রাক চালানো এবং সড়ক নষ্টের জন্য তাকে শাস্তির আওতায় আনা জরুরী।
মোঃ তরিকুল ইসলাম কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত
বাগেরহাট প্রধান কার্যালয়:
বাসস্ট্যান্ড আল আমিন হোটেল এর নিচে বাগেরহাট
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত